SHAKOWA BAKSHOIL KAMIL MADRASAH
MOHONPUR,RAJSHAHI. EIIN : 126821
সাম্প্রতিক খবর
*** সুবর্ণজয়ন্তী কর্ণার ***

সাঁকোয়া বাকশৈল কামিল মাদ্রাসার ইতিহাসঃ- প্রাচীন বাংলার পূর্নাঙ্গ ইতিহাস আজও লিখিত হয়নি এর পরও অন্যান্য ইতিহাস  স্বল্প কিছু লিপিবদ্ধ হলেওএদেশের  মাদ্রাসার ইতিহাস  একেবারেই পিছিয়ে  আছে।  বহু মূল্যবান তথ্য  ওউপাদান কাল গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।ফলে প্রচীন যুগের ইসলামী সমাজ, সভ্যতা ওসাংস্কৃতির ঘনিষ্ঠ পরিচয় মেলে না।  বাঙ্গালীর ঐতিহাসিক স্মৃতির   অভাবসম্পর্কে শতাধিক বছর পূর্বের লেখক বক্মিমচন্দ্র যা বলে গেছেন তারপ্রাসঙ্গিকতা আজও লুপ্ত হয় নাই, ‘‘ সাহেবরা যদি পাখি মারিতে যান তার ও ইতিহাস লিখিত হয় কিন্তু বাংলার ইতিহাস নাই।  যে দেশ হযরত শাহাজালাল, শাহমূখদুম, খান জাহান আলীর দেশ  সে দেশে মুসলিম সভ্যতার কোন ইতিহাস নাই।

          ঐতিহাসিক তথ্যের সল্পতা সত্বেও আমাদের জানতে অসুবিধা হয় না যে, সুদুরঅতীতেও শিক্ষা দীক্ষার প্রতি বাংগালীদের অনুরাগ ছিল অকৃত্তিম। প্রচীন কালের যে লিপিগুলি উদ্ধার করা হয়েছে  তা থেকে স্পষ্ট প্রতিয়মান হয়েছে যে, পাল বংশপ্রতিষ্ঠার সহস্রাধিক বছর পূর্ব হতে মৌর্য আমলে বাংলাদেশের ব্রাÿণ্য বিদ্যাও সাংস্কৃতিক সাহিত্যেও চর্চা আরম্ভ হয়েছিল। গোড়ারদিকে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে এবং দক্ষিণাংশে পরবর্তীকালে  সংস্কৃতিক ভাষার চর্চা শুরু হয়। তের শতকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার ফলে এদেশের রাষ্ট্রীয় ,ধর্মিও ,সামাজিক এবং  সংস্কৃতিক জীবনে এক বৈপস্নবিক পরিবর্তনেরধারা সূচিত হয়।

তের শতকে চেঙ্গিস খাঁর আক্রমনের ফলে মুসলিমজগত দারুণ ক্ষতিগ্রসত্ম হয় । বোখারা ,সমরখন্দ, বাগদাদ প্রভৃতি মুসলিম সভ্যতা ও সাংস্কৃতির কেন্দ্র ধংশ হয়। তখন অনেক জ্ঞানী গুনীব্যক্তি,পন্ডিত,ফকির,কবি, স্থপতি,ভাস্কও,চিত্রকর ইত্যাদী দলে, দলে, নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ভারতে আগমন করেন । এ সকল ব্যক্তিত্যের সমাবেশের ফলে দিল্লির শিল্পকলা ও জ্ঞান চর্চার প্রসিদ্ধ কেন্দ্রে পরিনত হয়তাদের অনেকে বাংলায়চলে আসেন কারণ বাংলার মুসলমান সুলতান জ্ঞানী গুনী ব্যক্তিদের সাদর আমত্রনজানান এবং অর্থ সম্মান দিয়ে দেশের নানা স্থানে প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে দিল্লির তুর্কী রাজপরিবারের নানা উত্থান পতনের ফলে অভিজাত সম্প্রদায়ের বহুসংখ্যক ব্যক্তি বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন, মোগল সম্যাজ্যপ্রতিষ্ঠার পর বহূ সংখ্যক  প্রধান প্রধান অধিনায়ক দিল্লী ত্যাগ করে এদেশে চলে আসেন।

এই সকল বহিরাগত মুসলমানদের প্রভাবে বাংলাদেশেইসলাম ও মুসলিম সভ্যতা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭৫৭সালে নবাবের পতনের ফলে  ইংরেজশাসন ব্যবস্থা শুরম্ন হয়  নেমে আসে মুসলমানমান সভ্যতার উপরকুঠারাঘাত,ইংরেজরা  ক্ষ্য করেন  ১৭৬৫ সালে বাংলায় ৮০,০০০ আশি হাজার মাদ্রাসার জন্য এদেশের চারভাগের এক ভাগ জমি লাখেরাজ হিসাবে বরাদ্দ ছিল ।ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী  এই লাখেরাজ সম্পত্তি আইন ,বিধি বিধান প্রনয়ন করেএবং জোর জবরদসিত্ম করে দেশের হিন্দু প্রজা ও জমিদারদের মাঝে ইজারা দিতে থাকে ফলে মাদ্রাসার আয় কমতে থাকে বহু মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যায়। মাদ্রাসাশিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ রুপে পরিকল্পিতরম্নপে ধংশ করে দেওয়া হয়, গুটিকয়েক  মাদ্রাসা টিকে থাকে। ১৭৬৫ সালে  বাংলায় মাদ্রাসার  সংখ্যা ছিল আশিহাজার ইংরেজদের ২০০ বছর পর ১৯৬৫ সালে এর সংখ্যা  ২০০০ দুই হাজারের নিচেনেমে আসে। সম্রাট শাহাজাহানের শাসনামলের পুর্বে (১৫১৫-১৫৩১) রাজশাহীর বাঘায় একটি বড় মাপের মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল , এরই ধারাবাহিকতায় বাঘামাদ্রাসার ছাত্রদের সহায়তায় সাঁকোয়া বাকশৈল ও বরিঠা গ্রামের জনগনের ইচ্ছায় সাঁকোয়া গ্রামে তদানিন্তন সময়ে একটি মাদ্রাসা স্থাপিত হয়েছিল পরবর্তীতে ইংরেজদের শাসনামলে মাদ্রাসার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায় কিন্তু এলাকার জনগনের দাবীর প্রেক্ষীতে শেষের দিকে লর্ড কার্জন এর  সময় অত্র এলাকার আতানারায়নপুর গ্রামের মৌঃ মোঃ কুতুব উদ্দিন  ও অত্র গ্রামের মৌঃ রিজুকুল্লা সাহেবের মাধ্যমে ১৯০৬ ইং সালে তদানিন্তন  নিয়মানুযায়ী রিজকুল উলুম নামে এখানে একটি মাদ্রাসা পূনস্থাপিত হয় ।১৯৪৯ সালে মাদ্রাসাটি বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ঢাকা কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৫৩ সনে দাখিল স্তরে ছাত্র/ছাত্রী পাবলিক পরীক্ষায় ১ম বারের মত অংশ গ্রহন করে এর পর১৯৭০/৭১ এর লেবারেশনের সময় মাদ্রাসা পাকিসত্মান হানাদার বাহিনীর হাতে চলেযায় । মাদ্রাসায় রাজাকারদের ক্যাম্প বানানো হয় এর ফলে মাদ্রাসার জমি জমার কাগজপত্র ও অফিসিয়াল নথিপত্র নষ্ট হয়ে মাদ্রাসার অস্থিত্ব একেবারে বিপন্ন হয়ে পড়ে।  দেশ স্বাধীনের পর  সিন্দুরীর মাওঃ আবু সাইদ সিন্দুরী, সাঁকোয়ারজনাব ছাবের আলী মৃধা, সিংহমারার মোঃ আঃ হামিদ মাষ্টার মাওঃ আঃ জলিল সাহেবসহ আরও অনেকের উদ্যেগের ফলে পুনঃবার দাখিল হিসেবে মাদ্রাসার কার্যক্রমশুরম্ন হয়। ০১/০৭/৮৭ ইং তারিখ হতে আলিম  ০১/০৭/১৯৯৩ ইং তারিখ হতে ফযিল ও০১/০৭/২০০১ ই্ং তারিখ হতে কামিল শ্রেণী পর্যন্ত  উন্নীত হয় এছাড়া ২০০৫-০৬শিক্ষা বর্ষ হতে এইস এস সি ( বি এম) ও ০১/০১/২০০৬ ই্ং তারিখ হতে এস,এস সি ভোক শিক্ষাক্রম চালু হয়। অত্র মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ফলে  এতদাঞ্চলে ইসলামীশিক্ষা বিস্তার , ইসলামী সমাজ ও পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী অধ্যায় সূচীত হয়েছে।